অন্য সাধারণ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী উল্লাস পাল। তিনি এর আগে ৪০তম বিসিএস ও ৪১তম বিসিএসেও মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন । ৪০তম বিসিএসে পাস করলেও ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কোনো পদেই সুপারিশ পাননি। তবে সেই সময়ের মনের কষ্ট এখন আর নেই উল্লাস পালের।
তিনি জানান, স্বাভাবিক ও সুস্থ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এত দূর এসেছি। হাত ও পা বাঁকা হওয়ার কারণে হাতে লিখতে সমস্যা হয়, ডান হাতে কোনো শক্তি পাই না। হাঁটতেও সমস্যা হয়। কিন্তু কখনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রতিবন্ধী কোটা নেওয়ার কথা চিন্তাও করিনি। মানসিকভাবে নিজেকে অন্য আর দশজনের মতো সুস্থ মনে করি। তবে অনেক বাধা এসেছিল, সেগুলো টপকে এত দূর এগিয়ে এসেছি।
চাকরির আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেইসবুক গ্রুপ যুক্ত থাকুন লিংক
জন্মের পর শিশুরা যে বয়সে স্বাভাবিক নিয়মে হাঁটা শেখে, উল্লাস পাল সেভাবে হাঁটতে পারতেন না। কারণ, জন্মগতভাবেই তাঁর দুই হাত ও দুই পা বাঁকা ছিল। তবে মা-বাবা তাঁর চিকিৎসার কমতি রাখেননি। চিকিৎসার জন্য ভারতেও নেওয়া হয়েছিল উল্লাস পালকে।
উল্লাস পাল বলেন, চিকিৎসকদের শত চেষ্টার পরও হাত-পা স্বাভাবিক হয়নি। তবে একটু বয়স হওয়ার পর হাঁটতে শিখি। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারি না। বাড়ির পাশেই কার্তিকপুর পালপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু হয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকায়নি।
শরীয়তপুরের কার্তিকপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। নর্দান কলেজ বাংলাদেশ থেকে এইচএসসিতেও জিপিএ–৫ পান। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ৪৬৩তম হয়েছিলেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন উল্লাস পাল। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতা সব সময়ই ভালো লাগত স্কুল-কলেজে। চাকরির পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রথম দিকে ভালো লাগত, কিন্তু অনেকগুলো ভাইভা দিয়েও না হওয়ায় একসময় হতাশ হয়েছিলাম। তখন কখনো ভাবতাম আমার প্রতি একটু নমনীয় হলে ভালো হতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেধাক্রমে যা এসেছে, তা–ই পেয়েছি।
চাকরির আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেইসবুক গ্রুপ যুক্ত থাকুন লিংক
তিনি জানান, নিজেকে একটু অন্য রকম লাগত। কারণ, সবাই আমার চেয়ে আলাদা। ছোটবেলা থেকেই একটা লজ্জাবোধ কাজ করত। স্কুলের সহপাঠীদের সঙ্গে খেলতে চেষ্টা করতাম, কিন্তু সেসব কঠিন খেলা (হাডুডু, গোল্লাছুট ও ক্রিকেট) আমার দ্বারা সম্ভব হতো না। তাই আমি দর্শক। স্কুলে যাওয়ার পথে অনেক অবুঝ বাচ্চারা আমার গঠন দেখে হাসি-তামাশায় ব্যস্ত থাকত। পড়াশোনায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে ছিলাম, তাই শিক্ষকদের কাছ থেকে ভালোবাসা পেয়েছি। বন্ধুদের সাহায্য পেয়েছি সব সময়। পরিবার সব সময় পাশে ছিল, নইলে এত দূর আসা সম্ভব ছিল না।