Site icon চাকরি।। নিয়োগ।। জবস

”জেদ ছিল বোনকে বিসিএস ক্যাডার বানাবেনই”

বিসিএস ফল।। চাকরি ডট কম।। প্রথম আলো।। কালবেলা। বাংলানিউজ ২৪ ডট কম

বিসিএস ফল।। চাকরি ডট কম।। প্রথম আলো।। কালবেলা। বাংলানিউজ ২৪ ডট কম

কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলার দিয়াকূল গ্রামে ১৯৭৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। চার বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। বাবা ছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একজন কর্মচারী। কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিকের পাঠ চুকিয়ে তিনি ভর্তি হন কিশোরগঞ্জ এস.ভি গভ. গার্লস হাই স্কুলে। সংসারে অভাব-অনটনের কারণে কোনো ধরনের প্রাইভেট না পড়েই এসএসসি পাস করেন শিউলি।

এস.ভি গভ. গার্লস হাই স্কুল থেকে ১৯৯৪ সালে এসএসসি পাস করে পরবর্তীতে একই জেলার গুরু দয়াল কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া শিউলির পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ ছিল ছোটবেলা থেকেই।

এসএসসি পাস করার পর পরই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় তাকে। মূলত বিয়ের পরেই তার পড়ালেখায় বাধ সাধেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পাশাপাশি শ্বশুরবাড়িতে অনেক মানসিক নির্যাতনও সহ্য করতে হয়েছে তাকে। তবে জীবনে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। একদিন সাহস করে সেই স্বপ্নের কথা শ্বশুরকে জানালে তিনি পড়ালেখা করার অনুমতি দেন।

পরবর্তীতে এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করার পর তাকে আর পড়ালেখা করতে দিতে রাজি হচ্ছিল না শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কিন্তু পড়ালেখার প্রতি ছোটবেলা থেকেই শিউলির ছিল প্রবল আগ্রহ। সেই আগ্রহ থেকেই শ্বশুর বাড়ির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মা ও বোনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। এরই মধ্যে শিউলি এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। তবে লেখাপড়া ছাড়েননি তিনি।

মা ও বড় বোনের চেষ্টায় তিনি ময়মনসিংহের সরকারি আনন্দমোহন কলেজে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতকে ভর্তি হন। তবে ছোট সন্তানের দেখাশোনা করে পড়ালেখার জন্য সময় বের করতে না পারায় অর্থনীতি বিষয়ে ৬ মাস অধ্যয়নের পর তিনি আবারও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হন। টানাটানির সংসারে টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচ চালিয়েছেন শিউলি।

আনন্দমোহন কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে ২৪তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেন। ২৪তম ও ২৫তম বিসিএসের প্রিলি, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ভাইভা বোর্ডে গিয়ে তিনি আটকে যান। তবে শিউলির বোন আশরাফুন্নেছার জেদ ছিল বোনকে বিসিএস ক্যাডার বানাবেনই।

পরবর্তীতে ২৭ তম বিসিএস পরীক্ষায় সফল হন শিউলি। প্রশাসনিক ক্যাডারে নিয়োগ পেয়ে রাঙামাটিতে প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন তিনি।


তার সাফল্যের পেছনে রয়েছেন তার মা ও বড় বোন। তাদের কারণেই নানা প্রতিকূলতার মাঝেও নিজের পড়ালেখা চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বোন আশরাফুন্নেছা না চাইলে তিনি কখনোই বিসিএস ক্যাডার হতে পারতেন না বলেও উল্লেখ করেন শিউলি।

দাম্পত্য জীবনে দুই কন্যা সন্তানের এ জননী মেয়েদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত এবং আত্মনির্ভরশীল না হয়ে বিয়ে না করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এখন মেয়েরাও সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠলে কোনো মেয়েকেই বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে নীপিড়ন সহ্য করতে হবে না।

Exit mobile version